মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিবেদক: শ্রীমঙ্গলে নাসার্রি ব্যবসা করে মানসিক শান্তিতে আছেন বিল্লাল সিকদার ও তার ছেলে মো. আল-আমিন। বর্তমানে বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে সবুজায়নের বিকল্প নেই। অন্যদিকে মানুষ বাড়ার সাথে সাথে ভুমির অধিক ব্যবহারে কাটা পড়ছে অসংখ্য গাছ। এর মধ্যে অনেক বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই পুন সবুজায়নে নাসারির বিকল্প নেই। বিষয়টি মননে নারা দেয় শ্রীমঙ্গলের বিল্লাল সিকদারের।
প্রায় ৩১ বছর আগে মাত্র ১০ হাজার টাকা সম্বল নিয়ে ভাড়া করা একটি জায়গায় শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। দায়িত্ব নেন অনেকটা একটি সন্তানের মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদানের। অর্থাৎ একটি গাছ বিজ বা কাটিং থেকে চারা হওয়া পর্যন্ত সন্তানের মতো লালন পালন করে বড় করেন। গাছগুলোকে তিনি এমন ভাবে তৈরী করেন যেন তার কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর সে একাই তার জীবন সার্কেল গড়ে তুলতে পারে। তার এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে
১টি নার্সারি থেকে এখন ৫টি নার্সারি তাদের। এই নার্সারি দিয়েই তাদের কষ্টের জীবনে সাফল্য এসেছে। ফিরেছে জীবনের ছন্দ।
জননী নার্সারির চারা ও বীজের চাহিদা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুনাম অর্জন করছে। তাদের এখানে এসে অনেকেই নার্সারি তৈরীর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শ্রীমঙ্গল পৌরশহরতলীর রেলগেইট, শ্যামলী, ও বিরাইমপুরে প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে তাদের ৫টি নার্সারিতে গাছের চারা তৈরীর কাজে এখন নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ১৫/২০ জন শ্রমিক। বাবা ছেলের সাথে তারাও এই নার্সারির আয় থেকেই সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন।
নার্সারির পরিচালক মো. আল-আমিনের জানান, জননী নার্সারির পরিচালকের পাশপাশি তিনি আনসার ভিডিপির শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের দলনেতা হিসেবেও রয়েছেন। তার বাবা বিল্লাল সিকদার বন বিভাগের লোকজনের সাথে থাকতেন। বন বিভাগের লোকজনের সাথে থাকাকালীণ সময়ে গাছের প্রতি তার একটা ভালোবাসা জন্ম নেয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের দিকে শখের বসে সামান্য জায়গা ভাড়া নিয়ে খুব ছোট পরিসরে একটি নার্সারি করেন তিনি। তখন তার মূলধন ছিলো মাত্র ১০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই বীজ ও গাছ কিনে নার্সারি করেন। তার কিছুদিন পরই সেই জায়গা ছেড়ে দিতে হয় তাকে। অনেক লোকসান হয় তার। কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি। নিজের জায়গা না থাকায় বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় তার নার্সারি স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। সর্বশেষ শ্রীমঙ্গল শ্যামলী আবাসিক এলাকায় একটি জায়গা দীর্ঘমেয়াদী লিজ নিয়ে কাজ মন বসান কাজে। এই সময়ে বাবার সাথে নার্সারি পেশায় অতপ্রোতভাবে জড়িত হন ছেলে আলামিন। বাবা ছেলে মিলে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি করতে থাকেন। এখন প্রতিমাসে গড়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার গাছের চারা ও বীজ বিক্রয় করেণ। যা থেকে সব খরচ মিটিয়ে মাসে ৫০/ ৬০ হাজার টাকা আয় হয়।
মো. আল-আমিন বলেন, ২০০৫ সালে লেখাপড়ায় থাকাবস্থায় তিনি বাবার সাথে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হন। তিনি জানান, এখন মানুষ খুব সৌখিন। বাড়িতে সুন্দর্যবধনের জন্য অনেকেই গাছ নেন। তাদের এই নার্সারি থেকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, বন বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তর চারা সংগ্রহ করেন। একই সাথে সৌখিন মানুষরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করে বীজ ও চারা সংগ্রহ করেন। তিনি জানান, দেশে বিলুপ্তপ্রায় ও বিদেশী চারা ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করে নিজে চারা তৈরী করেন।
তবে আল-আমিন জানান, আগের থেকে এখন গাছের চারা ও বীজের চাহিদা বাড়লেও নার্সারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। নার্সারি ব্যবসা খুবই লাভজনক হলেও ভালো প্রশিক্ষণ না থাকলে এই ব্যবসায় আসা ঠিক নয়। নার্সারিতে প্রচুর সময় দিতে হয়। আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চারা বাচিয়ে রাখতে হয়। একটি বীজ থেকে চারা তৈরীতে মাতৃস্নেহ দিতে হয়। যারা প্রচুর শ্রম ও ধৈয্য ধারনের ক্ষমতা রাখেন তারা এই ব্যবসায় আসলে লাভবান হবেন। বর্তমানে তার নার্সারিতে হাজারো জাতের চারা আছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে চারা সংগ্রহ করে সফলভাবে নতুন চারা করেছেন পাকিস্তানী মাল্টা, চায়না কমলা, রামভুটান,নাগপুরি কমলা, নেপালী ও ভিয়েতনামের নারিকেল,স্টার আপেল, ব্লাকডরিসহ শত প্রজাতি।